
“আমি খুব ছোটবেলাতেই পাতার মূল্য কিংবা টাকার মূল্য বুঝে ফেলেছিলাম”—এই কথার মাঝেই লুকিয়ে আছে এক সংগ্রামী জীবনের গল্প। মৌলভীবাজারের চা–বাগানে বেড়ে ওঠা পূজা নাইডু আজ চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (AUW) প্রি–আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন, আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তির সহায়তায়।
দরিদ্র পরিবারের প্রথম কন্যাসন্তান হিসেবে ছোটবেলা থেকেই অভাব পূজার নিত্যসঙ্গী। টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়াই ছিল তাঁর দৈনন্দিন বাস্তবতা। তবে করোনাকালে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কাজ হারান বাবা, মজুরি বন্ধ হয়ে যায় মায়ের। তখন পরিবারে বোঝা হয়ে ওঠার আশঙ্কায় পূজার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা শুরু হয় বিয়ের কথা পর্যন্ত।
ঠিক সেই সময় সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়ান তাঁর বড় ভাই। নিজে ছাত্র হয়েও তিনি নিজের পড়াশোনা থামিয়ে দেন, যেন পূজা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। পরিবারের এই ত্যাগ ও ভালোবাসাই হয়ে ওঠে পূজার এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার স্বপ্ন দেখা মোটেও সহজ ছিল না। প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দ্বিতীয়বারও একই ফল। আশপাশ থেকে শুনতে হয়েছে—“চা–বাগানের মেয়েরা কি এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে?” কিন্তু তিনবারের চেষ্টায় হার মানেননি পূজা। তৃতীয়বারেই আসে সাফল্য।
আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় দাঁড়িয়ে পূজা নাইডু বুঝতে পারেন, তাঁর পথচলা এখানেই শেষ নয়। ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি তাঁর কাছে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং নিজের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার সাহস ও আত্মবিশ্বাসের নাম।
ভবিষ্যতে তিনি চান, নিজের মতো চা–বাগানের মেয়েদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠতে। যেন কোনো মেয়েকে আর স্বপ্ন দেখার আগেই থেমে যেতে না হয়।
এই গল্প শুধু একজন পূজার নয়—এটি হাজারো অবহেলিত মেয়ের অদম্য লড়াই, সহনশীলতা ও সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি।