ইউনেস্কোর স্বীকৃতি: টাঙ্গাইল শাড়ি বয়ন এখন বৈশ্বিক ঐতিহ্যের তালিকায়

Unesco Tangail saree weaving

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বয়ন শিল্প বাংলাদেশের সংস্কৃতি, নান্দনিকতা এবং কারুশিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতীক। শত বছরের ঐতিহ্য বহনকারী এই শিল্প অবশেষে বিশ্বদরবারে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল। ইউনেস্কো টাঙ্গাইল শাড়ি বয়নকে “ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা দেশের জন্য এক বিশাল গৌরব।

 

ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি এসেছে দীর্ঘ গবেষণা, নথিপত্র সংগ্রহ, প্রমাণাদি উপস্থাপন এবং বয়নশিল্পের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরার পর। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, টাঙ্গাইলের কারুশিল্পী সংগঠন ও গবেষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

 

টাঙ্গাইল শাড়ি তার বিশেষ নকশা, কোমল বুনন এবং রঙের অনন্য সমন্বয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বিশেষ করে জামদানির মতো সূক্ষ্মতা, মসলিনের মতো নরমতা এবং গ্রামীণ বয়নশিল্পের সৌন্দর্য একত্রে ফুটে ওঠে প্রতিটি টাঙ্গাইল শাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরেই এটি দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছিল না।

 

এই স্বীকৃতি শুধু শাড়ি শিল্পের মর্যাদা বাড়ায়নি, বরং স্থানীয় তাঁতিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউনেস্কোর তালিকাভুক্তি অর্জনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা বাড়বে, যা রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে হাজার হাজার তাঁতি পরিবার এই বয়নশিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও কম দামের বাজার প্রতিযোগিতায় তাঁতিরা বহু বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছিলেন। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি তাঁদের জন্য নতুন আশার আলো।

 

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন এবং তাঁতি সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে, ভবিষ্যতে তাঁতশিল্পকে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান, কাঁচামালের সহজলভ্যতা এবং অনলাইন মার্কেটিং সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যও নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি হবে।

 

জাতীয় পর্যায়ে এই অর্জন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন মাত্রা যোগ করল। সরকার জানায়, আরও কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ভবিষ্যতে ইউনেস্কো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ চলছে।

 

এই অর্জন দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং কারুশিল্পকে নতুনভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে—এটি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক স্মরণীয় মুহূর্ত।

Read More:https://dbnnewstoday.com