মানবাধিকার দিবস ও অসমাপ্ত বিপ্লব: জুলাই আন্দোলনের স্বপ্ন আজ কোথায় দাঁড়িয়ে

Human Rights Day July Movement Bangladesh

১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয় এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ নতুন করে ভাবছে নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন নিয়ে। বিশেষ করে চলতি বছরের জুলাই আন্দোলন দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যার লক্ষ্য ছিল জবাবদিহিতা, আইনের শাসন এবং মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা।

 

জুলাই আন্দোলনের সময় তরুণেরা, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে মানবাধিকার লঙ্ঘন, অবিচার, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া এবং জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আন্দোলনটি তখন মনে হয়েছিল একটি নতুন রাজনৈতিক-সামাজিক জাগরণের সূচনা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে প্রশ্ন উঠছে সেই বিপ্লব কি অসমাপ্ত থেকে গেল? আন্দোলনের স্বপ্নগুলো আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?

 

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আন্দোলনের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব অগ্রগতি এখনো সীমিত। তথ্য অধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা এসব ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বড় কাঠামোগত পরিবর্তন এখনো চ্যালেঞ্জ।

 

অন্যদিকে আন্দোলনের অনেক তরুণ নেতা মনে করেন, জুলাই আন্দোলন একটি গণচেতনার ভিত্তি তৈরি করেছে, যা যেকোনো গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য। তারা মনে করেন, আন্দোলনের মূল অর্জন ছিল মানুষের মধ্যে ভয় ভাঙা এবং অধিকার রক্ষার সাহস তৈরি করা। তবে তারা এটিও স্বীকার করেন যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে মানবাধিকার সুরক্ষা সম্ভব নয়।

জুলাই আন্দোলনের সময় তুলে ধরা হয় বেশ কয়েকটি মৌলিক দাবি—

  • ­গুম, খুন ও অতিরিক্ত বল প্রয়োগের স্বচ্ছ তদন্ত
  • মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি
  • শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বৈষম্য দূর করা
  • রাজনৈতিক সংস্কারিায় তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি

মানবাধিকার দিবসের এ দিনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি আন্দোলন সফল করতে শুধু রাস্তায় থাকা যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্থায়ী সংস্কার, আইনের শাসন নিশ্চিত করা ও জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই আন্দোলন এসব দাবিকে সামনে এনেছিল; তবে কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য আরও ধারাবাহিকতা ও নীতি-সংস্কার প্রয়োজন।

 

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও একই সুশাসন, বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা, নিরাপদ সমাজ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। মানবাধিকার দিবস তাই শুধু একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান নয়, বরং সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন কখনোই পুরোপুরি শেষ হয় না।

 

জুলাই আন্দোলনের অসমাপ্ত বিপ্লব তাই আজও অনুপ্রেরণা, ­যে বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল মানুষের মর্যাদা, রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন।

Read More: https://dbnnewstoday.com