Advertisement

মাথা ঘোরা কমানোর ব্যায়াম: ভারসাম্য বজায় রাখার সহজ উপায়

মাথা ঘোরা কমানোর ব্যায়াম এমন কার্যকর উপায় যা দৈনন্দিন জীবনে আপনার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাথা ঘোরা বা dizziness হঠাৎ ঘোরা, ভারসাম্যহীনতা বা মাথা হালকা অনুভূতিতে প্রকাশ পায় এবং সাধারণত কানের সমস্যা, কম রক্তচাপ, পানিশূন্যতা বা মানসিক চাপের কারণে ঘটে। দীর্ঘস্থায়ী মাথা ঘোরা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে মাথা ঘোরা কমানো এবং চলাফেরায় স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

১. মাথা ও গলার হালকা ব্যায়াম

মাথা এবং গলার ব্যায়াম মস্তিষ্ককে অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। আরামদায়কভাবে বসে আস্তে আস্তে মাথা বাঁ-ডান ঘোরান। প্রতিটি দিক কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। এরপর মাথা কাঁধের দিকে ঢালাও এবং পাল্টা দিক করুন। প্রতিদিন ৫–১০ বার পুনরাবৃত্তি করুন। এটি ভেস্টিবুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

২. চোখ ফোকাস বা Gaze Stabilization ব্যায়াম

চোখ একটি স্থির বস্তুর দিকে রাখার সময় মাথা ধীরে ধীরে ঘোরানো ভেস্টিবুলার সিস্টেমকে উন্নত করে। আরামদায়কভাবে বসে বা দাঁড়িয়ে চোখ একটি স্থির লক্ষ্যবস্তুতে রাখুন। ধীরে ধীরে মাথা বাঁ-ডান করুন, কিন্তু চোখ লক্ষ্যবস্তুতে রাখুন। প্রতিদিন কয়েকবার করুন এবং ধীরে ধীরে পুনরাবৃত্তি বাড়ান। এটি চোখ ও কানের মধ্যে সমন্বয় বাড়ায় এবং স্থিতিশীলতা উন্নত করে।

৩. ভারসাম্য উন্নত করার ব্যায়াম

ভারসাম্য প্র্যাকটিস করলে পড়ে যাওয়া রোধ হয় এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

  • দুই পা মিলিয়ে দাঁড়ান, হাত পাশে রাখুন।

  • এক পায়ে ১০–১৫ সেকেন্ড দাঁড়ান, তারপর পাল্টান।

  • সরলরেখায় হাঁটার অনুশীলন করুন।

  • চেয়ার ধরে হালকা স্কোয়াট বা ওজন স্থানান্তর করুন।

এ ধরনের ব্যায়াম দৈনন্দিন জীবনে স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং মাথা ঘোরা কমায়।

৪. Epley Maneuver

যদি মাথা ঘোরা Benign Paroxysmal Positional Vertigo (BPPV) থেকে হয়, তবে Epley Maneuver খুব কার্যকর। এটি কানের ছোট ক্রিস্টালগুলোকে এমন অবস্থানে আনে যা ভের্টিগো সৃষ্টি করে। প্রথমবারে একজন চিকিৎসকের সাহায্যে শেখা উত্তম, এরপর প্রয়োজনে বাড়িতেও করা যায়।

৫. হালকা হাঁটা ও কার্ডিও

হালকা হাঁটা বা কার্ডিও রক্তস্রোত বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং ভেস্টিবুলার সিস্টেম শক্তিশালী করে। প্রথমে দৈনিক ৫–১০ মিনিট হাঁটা শুরু করুন। ধীরে ধীরে সময় বৃদ্ধি করুন। শুরুতে হঠাৎ মাথা না ঘোরান।

৬. শ্বাস-প্রশ্বাস ও রিল্যাক্সেশন

চিন্তা ও চাপ মাথা ঘোরা বাড়াতে পারে। গভীর শ্বাস, মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম চাপ কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • আরামদায়কভাবে বসুন।

  • নাক দিয়ে ৪–৫ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন।

  • কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন।

  • ধীরে ধীরে শ্বাস বের করুন।

প্রতিদিন কয়েক মিনিট এই প্র্যাকটিস করুন।

নিরাপত্তার টিপস

  • সব সময় নিরাপদ পরিবেশে ব্যায়াম করুন, প্রয়োজনে দেওয়াল বা চেয়ার ধরুন।

  • ধীরে ধীরে আন্দোলন করুন, হঠাৎ না ঘোরান।

  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

  • ব্যথা বা ভারসাম্য হারালে ব্যায়াম বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিয়মিত ব্যায়ামের সুফল

নিয়মিত ব্যায়াম করলে মাথা ঘোরা কমে এবং ভারসাম্য উন্নত হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়। ভেস্টিবুলার সিস্টেম শক্তিশালী হলে চলাফেরায় আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

তবে যদি মাথা ঘোরা দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। ব্যায়াম সহায়ক হলেও সঠিক চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

Frequently Asked Questions (FAQ)

১. মাথা ঘোরা কমাতে কতদিন ব্যায়াম করতে হবে?
প্রতিদিন ৫–১০ মিনিট ব্যায়াম শুরু করুন। সাধারণত ২–৩ সপ্তাহে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়।

২. হঠাৎ মাথা ঘোরা হলে কি ব্যায়াম করা যাবে?
হঠাৎ ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা থাকলে ব্যায়াম করা উচিত নয়। প্রথমে বসে বা স্থির থাকুন। সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. Epley Maneuver কি বাড়িতেই করা যায়?
প্রথমবারে একজন চিকিৎসকের নির্দেশে শেখা উত্তম। একবার সঠিকভাবে শেখার পর প্রয়োজনে বাড়িতেও করা সম্ভব।

৪. কোন ব্যায়াম বেশি কার্যকর?
সকল ব্যায়াম একসাথে করলে সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যায়। মাথা-গলা ব্যায়াম, চোখ ফোকাস এবং ভারসাম্য অনুশীলন একসাথে করলে মাথা ঘোরা দ্রুত কমে।

৫. খাবার বা পানি কি মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করে?
হ্যাঁ, পর্যাপ্ত পানি পান এবং সুষম খাবার মাথা ঘোরা কমাতে সাহায্য করে। পানিশূন্যতা ও কম রক্তচাপ মাথা ঘোরা বাড়ায়।

 Follow Our facebook Page 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *