
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহজ ঋণ সুবিধা, অনলাইন ব্যবসার বিস্তার, প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির কারণেই নারীরা অভূতপূর্ব হারে ব্যবসা শুরু করছে। পাশাপাশি কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিবর্তন নারীদের উদ্যোক্তা মানসিকতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
উন্নয়নশীল দেশে নারী উদ্যোক্তার উত্থান আরও শক্তিশালী
গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী:
• বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও রুয়ান্ডায় নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা গত এক বছরে ২২–৩৮% পর্যন্ত বেড়েছে।
• আফ্রিকার নাইজেরিয়া, ঘানা ও কেনিয়ায় নারী-নেতৃত্বাধীন ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখন অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি।
• শুধু ল্যাটিন আমেরিকাতেই ২০২৪–২৫ সালে নতুন নিবন্ধিত ব্যবসার ৪৮% প্রতিষ্ঠাতা নারী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম, ডিজিটাল ব্যাংকিং, সহজ রিফাইন্যান্স স্কিম, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ—এগুলো নারীদের অংশগ্রহণকে আরও সহজ এবং নিরাপদ করেছে।
কোন কোন খাতে নারীদের প্রবেশ বাড়ছে?
২০২৫ সালের রিপোর্টে দেখা গেছে, নারীরা এখন শুধু হস্তশিল্প বা বুটিকেই সীমাবদ্ধ নন।
নতুন উত্থান দেখা যাচ্ছে—
• টেক স্টার্টআপ
• ই-কমার্স
• ডিজিটাল সেবা
• ফুড ও বেভারেজ ব্র্যান্ড
• পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন
• ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্ক
• কৃষি–উদ্যোগ ও অর্গানিক পণ্য
এগুলোই ভবিষ্যতে নারী–নেতৃত্বাধীন ব্যবসার প্রধান শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
নারী উদ্যোক্তাদের নতুন চ্যালেঞ্জ
যদিও উন্নতি স্পষ্ট—তবুও নারীরা এখনো কিছু বাস্তব সমস্যায় পড়ছেন:
• অনেক দেশে ব্যবসায়িক পরামর্শ ও আর্থিক সেবায় সীমাবদ্ধতা
• ডিজিটাল নিরাপত্তা ও অনলাইন প্রতারণার ভয়
• পরিবার–সমাজের মানসিক বাধা
• বাজারে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা
• বিনিয়োগকারীদের পক্ষপাত
• গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের তথ্য–অভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে পারলে বিশ্ব অর্থনীতিতে নারীশক্তির অবদান আরও বহুগুণ বাড়বে।
বৈশ্বিক উদ্যোগ: নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সহায়তা
২০২৫ সালে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে—
• UN Women “Women’s Economic Acceleration Fund” চালু করেছে, যা নারী–নেতৃত্বাধীন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে।
• World Bank দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় ১ বিলিয়ন ডলারের “Gender-Smart Financing” প্রকল্প ঘোষণা করেছে।
• Google ও Meta নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন ডিজিটাল স্কিল–ট্রেনিং চালু করেছে।
এই উদ্যোগগুলো আগামী কয়েক বছরে বিশ্বের নারী–নেতৃত্বাধীন ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী ভিত্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেষ কথা
বিশ্বব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের এই উত্থান শুধু অর্থনৈতিক পরিবর্তন নয়—এটি সামাজিক পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নারী অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে পরিবার, সমাজ, কর্মক্ষেত্র এবং পুরো দেশই আরও এগিয়ে যায়।
২০২৫ সালে নারীদের এই বৈশ্বিক সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
নারী যখন সুযোগ পায়, তখন সে শুধু নিজের ভবিষ্যত নয়, পুরো সমাজের ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে।