
দেশের রাজনীতিতে দৃশ্যমান ও নীরব—দুইভাবেই নারীর অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে ফল নির্ধারণে নারীর ভোট ও অবস্থান হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
সম্প্রতি নানা রাজনৈতিক আন্দোলন, গণআন্দোলন ও সামাজিক উদ্যোগে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে—তাঁরা শুধু অনুসারী নন, বরং পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের শিক্ষিত, কর্মজীবী ও মধ্যবিত্ত নারীরা এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী।
নারীর ভোট কেন গুরুত্বপূর্ণ
দেশের মোট ভোটারের বড় একটি অংশ নারী। কিন্তু বহু বছর ধরেই তাঁদের রাজনৈতিকভাবে “নিরব ভোটার” হিসেবে দেখা হয়েছে। সমাজিক বাধা, নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক চাপ কিংবা রাজনৈতিক পরিসরে নারীর সম্মানজনক অবস্থান না থাকায় অনেক নারী ভোটকেন্দ্রে গেলেও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাননি।
তবে সময় বদলাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নারীর আর্থিক স্বাবলম্বিতা তাঁদের রাজনৈতিক ভাবনাকে বদলে দিচ্ছে। তাঁরা এখন আর শুধু আবেগ বা পারিবারিক সিদ্ধান্তে ভোট দিতে চান না—চান প্রতিনিধিত্ব, নিরাপত্তা, ন্যায্যতা ও সম্মান।
চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে
বিশ্লেষকদের মতে, নারীর ভোটাধিকার পুরোপুরি কার্যকর করতে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা, হয়রানি থেকে সুরক্ষা, চলাচলের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ভয় দূর না হলে অনেক নারী ভোট দিতে আগ্রহ হারাতে পারেন।
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সামাজিক চাপ, ধর্মীয় বা নৈতিক বাধা এবং রাজনৈতিক ভয়ভীতি নারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বড় প্রতিবন্ধক।
রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বার্তা
এই বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বার্তাটি স্পষ্ট—নারীদের শুধুই ভোটব্যাংক হিসেবে দেখলে চলবে না। তাঁদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য কর্মসূচি, বাস্তবভিত্তিক প্রতিশ্রুতি এবং নেতৃত্বের জায়গায় নারীর দৃশ্যমান উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে দল নারীর নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও সামাজিক মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেবে—নারীরা ভবিষ্যতে সেই দলকেই সমর্থন করবেন।
শেষ কথা
আগামী নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি পরীক্ষার লড়াই নয়—এটি হতে পারে নারীর সচেতন রাজনৈতিক উত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। যদি নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, তবে নারীরাই হতে পারেন আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের নির্ধারক শক্তি।