বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে SaaS (Software as a Service)–ভিত্তিক স্টার্টআপগুলো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রপ্তানি সক্ষমতা অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্রাহক বাড়ছে বাংলাদেশি SaaS পণ্যের।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের SaaS খাত রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)–এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে,
গত দুই বছরে দেশীয় SaaS স্টার্টআপগুলো প্রায় ৩০% রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
এখনকার SaaS পণ্যগুলো মূলত—
-
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল
-
HRM সিস্টেম
-
POS সলিউশন
-
কাস্টমার সাপোর্ট অটোমেশন
-
ইনভয়েসিং ও অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার
-
ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম
এ ধরনের সেবা বিদেশি গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সাশ্রয়ী মূল্য ও দ্রুত সাপোর্ট—সফলতার মূল কারণ
SaaS স্টার্টআপগুলোর প্রতিষ্ঠাতারা মনে করেন, বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় বাংলাদেশের পণ্য কম খরচে উচ্চমানের সেবা দিতে পারছে।
ফলে startups, small enterprises, freelancers—সবাই বাংলাদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছে।
একজন স্টার্টআপ সিইও বলেন:
“আমরা ২৪/৭ সাপোর্ট, কাস্টমাইজড ফিচার এবং সাশ্রয়ী সাবস্ক্রিপশন দিচ্ছি। এগুলোই বিদেশি ক্লায়েন্টদের আমাদের দিকে টেনে আনছে।”
স্থানীয় বাজারেও দ্রুত চাহিদা বাড়ছে
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন ডিজিটাল টুল ব্যবহার করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী।
মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে:
-
অনলাইন POS
-
HR সফটওয়্যার
-
স্কুল ম্যানেজমেন্ট SaaS
-
ই-কমার্স অটোমেশন
-
হিসাব–নিকাশ সফটওয়্যার
এগুলোর সহজ ব্যবহার, ক্লাউড-ভিত্তিক ব্যাকআপ এবং কম খরচের কারণে বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ: দক্ষ জনবল ও বৈদেশিক পেমেন্ট সমস্যা
যদিও খাতটি দ্রুত বেড়েছে, কিন্তু উদ্যোক্তাদের মতে—
-
আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সংকট
-
গ্লোবাল মার্কেটিং টিমের ঘাটতি
-
ডলার পেমেন্ট গ্রহণে জটিলতা
-
আন্তর্জাতিক লিগ্যাল কমপ্লায়েন্স
এসব কারণে আরও দ্রুত স্কেলআপ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকারি উদ্যোগ উন্নতির আশা দিচ্ছে
আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, SaaS ব্যবসা সহজ করতে রপ্তানি নীতি ও পেমেন্ট গাইডলাইন হালনাগাদ করা হচ্ছে।
এক কর্মকর্তা বলেন:
“বাংলাদেশের SaaS খাত এখন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ভালো অবস্থানে। আমরা নীতি সহজ করলে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।”
বিশেষজ্ঞদের ধারণা—সামনে আরও বড় বিস্ফোরণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক বছরে দেশীয় SaaS স্টার্টআপগুলো গ্লোবাল মার্কেটে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।
অনেকেই মনে করেন, “পরবর্তী ইউনিকর্ন বাংলাদেশ থেকে আসবে SaaS সেক্টর থেকেই।”
বাংলাদেশের SaaS স্টার্টআপগুলো এখন আর শুধু দেশীয় বাজারে সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক গ্রাহক, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী সমাধান—সব মিলিয়ে এই খাত রপ্তানি অর্থনীতির নতুন শক্তি হয়ে উঠছে।
সঠিক নীতি ও পরিকাঠামো পেলে SaaS হতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল প্রযুক্তিখাতগুলোর একটি।